
ইমাম হাসান জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. এজাবুল হক বুলির প্রপ আবারও একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. জোনাব আলী (মামলা নং ১১)।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অধ্যক্ষ এজাবুল হক বুলির নির্দেশে তার ছেলে নাফিস এজাজ ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে প্রভাষক জোনাব আলীকে একাধিক হুমকিমূলক বার্তা পাঠান। এছাড়া একই নম্বর থেকে ফেসবুকে অশালীন মন্তব্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এমনকি জোনাব আলীর নামে একটি ভুয়া আইডি খুলে তার ভাবমূর্তি নষ্টেরও চেষ্টা চালানো হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, অধ্যক্ষ এজাবুল হক বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক ও কৌশলে প্রভাষক জোনাব আলীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করেছেন। অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকেও একইভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে, যার অডিও রেকর্ড কলেজে সংরক্ষিত আছে। অধ্যক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে একাধিকবার অপমান ও নির্যাতন করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
প্রভাষক জোনাব আলীর দাবি, অধ্যক্ষ এজাবুল হক ছলে-বলে-কৌশলে মানসিক ও আর্থিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর কলেজে তাকে জোরপূর্বক আটকিয়ে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী আমলে প্রভাবশালী ও বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত এজাবুল হকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। জুলাই ২০২৪ আন্দোলনের সময় থেকে তিনি কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন, তবু পলাতক অবস্থায় থেকেও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন বলে দাবি মামলাকারীর।
অধ্যক্ষ এজাবুল হকের বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক মামলা রয়েছে—যার মধ্যে একটি চাঁদাবাজির মামলা (নং ২২, তারিখ ১৩/০৬/২০০৭) ও একটি হত্যা মামলা (নং ২৮, তারিখ ২৫/১২/২০২৫) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইভটিজিং, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একাধিক তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হয়েছে।
তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, তবে তিনি এখনো কোনো জবাব দেননি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মো. মেসবাহুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও, তিনি ২০ মে ২০২৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে বদলি হন।
অধ্যক্ষ বুলির অনুপস্থিতির সময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন এবং জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তার অফিসের চাবি জমা দেন।
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ এজাবুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মানবজমিন, সমকাল, শিক্ষাডটকম, আমাদের বার্তা, সোনামসজিদসহ অন্তত ২৫টি সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন-এতসব অভিযোগ ও তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরও কীভাবে তিনি এখনো অধ্যক্ষের পদে বহাল আছেন?