
নিজস্ব প্রতিবেদক,
অনিয়ম আর নির্যাতনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারীরা (এফডাব্লিউএ)। বহু বছর ধরে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন নিজ অফিসের সহকর্মীদের কাছেই। সব জেনেও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের নিরবতা এবং না জানার ভান একদিকে অপরাধিদের সম্মতি দেয়। আর অন্যদিকে সব অন্যায় মেনে নেয়ার মানষিকতা তৈরি হয়।
এই অফিসে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ২জন ১৬বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন। দূর্ণীতির বলয় তৈরি করে কথায় কথায় তাঁদের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তোলেন বেশ কয়েকজন পরিবার কল্যাণ সহকারী। চাকরী হারানো সহ হেনস্থার ভয়ে কেউ এই অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না। তবে চাঁদাবাজি এবং অনিয়মের স্থায়ী প্রতিকার চান সবাই। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অপরাধের নানা ভয়ানক চিত্র।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, সম্প্রতি পরিবার কল্যাণ সহকারীদের কাছ থেকে টিএডিএ বিলের নামে প্রতি ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক(এফপিআই) এর হাতে ২৪শত থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং সাবেক একটি ইউনিয়ন (বর্তমানে বিলুপ্ত সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন) সহ মোট ১০টি ইউনিয়নের বেশ কিছু পরিবার কল্যা্ণ সহকারী এই তথ্য দিয়েছেন। পরিবার কল্যাণ সহকারীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জোর করে এই টাকা নিয়েছেন পরিবার কল্যান পরিদর্শক পদের লোকজন।
এই টাকা ফেরত দিতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান এর সাথে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তাইফুর রহমান। আর সাংবাদিকদের কাছে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান এবং বেশ কয়েকজন সুপারভাইজার।
পরিবার কল্যাণ সহকারীরা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, টিএডিএ বিল এর জন্য আমাদের কাছ থেকে শতকরা ৩০টাকা হারে টাকা নিয়েছে। আমরা ২৪শত টাকা থেকে ৩হাজার টাকা করে দিয়েছি।
আমরা জানিনা আমাদের প্রকৃত বিল কত। কেউ হয়তো ৩হাজার টাকা বিল পাবে – যার ২৪শত টাকা আগেই অফিস হাতে হাতে নিয়ে নিলো। আসলে এটা প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। আমরা নিরুপায়। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে আলাদা ভাবে আামরা আমাদের সমস্যার কথা বলেছি কিন্তু তিনি আমলে নেন নি। তার নিরবতা এবং জেনেও না জানার ভান আমাদের ভীত করে। আমরা এই অনিয়ম থেকে মুক্তি চাই এবং আমাদের উপরে চাঁদাবাজি করে নেয়া টাকা ফেরত চাই।
আমাদের ছোট খাট যে কোন কাজ করতে গেলেও অফিস সহকারী টাকা ছাড়া করেন না। যে কোন অজুহাতে আমাদের টাকা কেটে নেন। অবস্থা এমন যে তিনি দয়া করে আমাদের কাজ করে দিচ্ছেন।
এরিয়ার বিল সহ বিভিন্ন টাকার সঠিক হিসাব আমরা পাই না। ট্রেনিংযের টাকাও কেটে একাকার করা হয়।
অফিস সহকারী ১৬বছরের বেশি সময় ধরে এই অফিসে থাকলেও তাঁর বদলি হয়না। এই সমস্যা নতুন নয়। বহু বছর ধরেই আমরা জিম্বি এবং নির্যাতিত হয়ে আসছি। এটা এক আজব অফিস।
জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়ে আমার জানা নাই।
উপজেলার চোপিনগর এবং মাদলা ইউনিয়নের পরিবার কল্যান পরিদর্শকদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আমরা কোন টাকা নেই নাই।
জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাইফুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে। টাকা নিলে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলেছি।