
বাগমারা উপজেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন মাড়িয়া মোড়ে পাশে হড়ম বিলে পুকুর খনন বন্ধ করে দেওয়ার পাশা পাশি আটক হওয়া ব্যক্তির দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত । মঙ্গলবার (৬ মে -২০২৫) বিকেলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পুকুর খনন বন্ধ করে দেওয়ার পাশা পাশি আটক হওয়া ব্যক্তির দুই লাখ টাকার অর্থদ- অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড রায় দেন।
এই পুকুর খনন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে মোহনপুরের চপল নামের এক যুবক। গৃহবধূ রোকসানা বেগম (৪৬) বেগম ও তাঁর দেবর গোলাম রহমান মিলে বাড়ির পাশে হড়ম বিলে ২৯ শতক জমিতে এবার বোরো চাষ করেছিলেন। ওই জমি টুকু তাঁদের সম্বল। ধানগুলোতে পাক ধরেছিল।
কয়েক দিন পরেই ঘরে তুলতে পারতেন। তবে এর আগেই প্রভাবশালী বিএনপির নব্যনেতা বিদ্যুৎ হোসেন লোকজন নিয়ে গৃহবধূ রোকসানা বেগম সহ কয়েকজন কৃষকের প্রায় ১০০ বিঘা জমির চারপাশে মাটির সীমানা দিয়ে ঘিরে ফেলেন পুকুর খননের জন্য।দন্ড পাওয়া ওই ব্যক্তির নাম মাজহারুল ইসলাম চপল (৩৬)। তিনি রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দন্ড পাওয়া ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে রাখা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের করখন্ড গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী বিদ্যুৎ হোসেন কিছুদিন আগে পশ্চিম দৌলতপুর গ্রামের অর্ধ শতাধিক কৃষকের জমি দখল করে পুকুর খননের প্রক্রিয়া শুরু করেন। ওইসব জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। তিনি এক্সেভেটর দিয়ে প্রায় ১০০ বিঘা জমির চারপাশে ঘিরে ফেলে পুকুর খনন শুরু করেন।এসময় জমির মালিকেরা বাধা দিতে গেলে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে হুমকী দেওয়া হয়। নিরুপায়ে কৃষকদের পক্ষে গৃহবধূর স্বামী মাইনুদ্দিনসহ দুই ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহাবুবুল ইসলাম সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। তিনি সেখানে কৃষকদের জমি ঘিরে নিয়ে পুকুর খননের দৃশ্য দেখতে পান। এসময় পুকুর খননকারীদের ভাড়াটে মাজহারুল ইসলাম ওরফে চপলকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তিনি পুকুর খননের দেখভাল করছেন বলে স্বীকার করেন। পরে তাঁকে আটক করা হয়। একই সময়ে পুকুর খননের কাজে ব্যবহার করা এক্সেভেটরের ক্ষতি করেন।
স্থানীয় অর্ধশত কৃষক জানান, ভাড়াটে লোকজন নিয়ে তাঁদের ধানচাষ করা জমি দখল করে পুকুর খনন শুরু করা হয়েছে। জমির চারপাশে লোকজন পাহারা বসিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে।উপজেলার বাকশৈল গ্রামের গৃহবধূ রোকসানা বেগম ও তাঁর দেবব গোলাম রহমান জানান, তাঁদের ২৯ শতকসহ এলাকার কৃষকদের প্রায় ১০০ বিঘা জমি দখলে নিয়ে পুকুর খনন শুরু করা হয়েছে। আর কয়েকদিন পরে ধান ঘরে তুলতে পারতেন তবে সে সুযোগও দেওয়া হয়নি। অভিযানের পরেই তাঁদের বাড়ী ঘরে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত বিদ্যুৎ হোসেনের সঙ্গে কয়েক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। সে কারণে তাহার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পক্ষের লোকজন জানান, কৃষকদের কাছ থেকে পুুকুর খননের জন্য জমি ইজারা নেওয়া হয়েছে।ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের জমি দখল করে পুকুর খননের দৃশ্য দেখা গেছে। এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের জমি উদ্ধার করা হয়েছে।